Header Ads

মহাস্থানগড়, বগুড়া


মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। প্রসিদ্ধ এই নগরী ইতিহাসে পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর নামেও পরিচিত ছিল এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল। যিশু খ্রিষ্টের জন্মেরও আগে অর্থাৎ প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে এখানে সভ্য জনপদ গড়ে উঠেছিল প্রত্নতাত্ত্বিক ভাবেই তার প্রমাণ মিলেছে। ২০১৬ সালে এটি সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা হয়
মহাস্থানগড়, বগুড়া-View Bangladesh

প্রাচীর বেষ্টিত এই নগরীর ভেতর রয়েছে বিভিন্ন আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত স্থান পরাক্রমশালী মৌর্য, গুপ্ত, পাল সেন শাসকবর্গের প্রাদেশিক রাজধানী পরবর্তীকালে হিন্দু সামন্ত রাজাদের রাজধানী ছিল। তৃতীয় খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে পঞ্চদশ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অসংখ্য হিন্দু রাজা অন্যান্য ধর্মের রাজারা রাজত্ব করেন। মহাস্থানগড়ের অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কি.মি. উত্তরে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে গেলে এই শহরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়৷
১৮০৮ খ্রিস্টাব্দেবুচানন হামিল্টনসর্বপ্রথম পুন্ড্রনগরের ধংসাবসেস আবিস্কার করেন

মহাস্থানগড়ের দর্শণীয় স্থানসমূহ

বৈরাগীর ভিটাঃ যুগ ধরে এটি নির্মিত হয়েছিল। খননের পর কিছু মন্দিরের অবশিষ্টাংশ পাওয়া যায়। ২টি মূর্তি খচিত কষ্টিপাথরের পিলার সংরক্ষণ করা হয়
খোদারাপাথার ভিটাঃ অঞ্জলিতে পাথর খচিত মহান বুদ্ধ এবং তাঁর অনুসারীদের প্রতিকৃতি সংরক্ষণ করা হয়
কালীদহ সাগরঃ
গড়ের পশ্চিম অংশে রয়েছে ঐতিহাসিক কালীদহ সাগর এবং পদ্মাদেবীর বাসভবন। কালীদহ সাগর সংলগ্ন ঐতিহাসিক গড় জড়িপা নামক একটি মাটির দূর্গ রয়েছে। প্রাচীন এই কালীদহ সাগরে প্রতিবছরের মার্চ মাসে হিন্দু ধর্মালম্বীদের রারুন্নী স্নান অনুষ্ঠিত হয়। স্নান শেষে পুণ্যার্থীগণ সাগরপাড়ে গঙ্গাপূজা সংকীর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন
শীলাদেবীর ঘাটঃ গড়ের পূর্বপাশে রয়েছে করতোয়া নদী এর তীরেশীলাদেবীর ঘাট শীলাদেবী ছিলেন পরশুরামের বোন। এখানে প্রতি বছর হিন্দুদের স্নান হয় এবং একদিনের একটি মেলা বসে
জিউৎকুন্ড কুপঃ মহাস্থান গড়ের শীলাদেবীর ঘাটের পশ্চিমে জিউৎকুন্ড নামে একটি বড় কুপ আছে। কথিত আছে এই কুপের পানি পান করে পরশুরামের আহত সৈন্যরা সুস্থ হয়ে যেত। যদিও এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি
মানকালির দ্বীপঃ এখানে প্রাপ্ত প্রত্নতত্ত্বর মধ্যে রয়েছে পোড়ামাটির অলংকার থালা বাসন, তাম্র দিয়ে তৈরি গণেশের মূর্তি এবং পনেরো গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের অবশিষ্টাংশ
গোবিন্দ ভিটাঃ মহাস্থানগড় জাদুঘরের ঠিক সামনেই গোবিন্দ ভিটা অবস্থিত। গোবিন্দ ভিটা একটি খননকৃত প্রত্নস্থল। গোবিন্দ ভিটা শব্দের অর্থ গোবিন্দ (হিন্দু দেবতা) তথা বিষ্ণুর আবাস। কিন্তু বৈষ্ণব ধর্মের কোনো নিদর্শন স্থানে পাওয়া যায়নি। তবুও প্রত্নস্থলটি স্থানীয়ভাবে গোবিন্দ ভিটা নামে পরিচিত
তোতারাম পণ্ডিতের ধাপঃ এটি পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত। এখানে ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি বৌদ্ধ বিহারের অবশিষ্টাংশ খুঁজে পাওয়া যায়
গোকুল মেধঃ এই স্থানটি বেহুলার বাসর ঘর অথবা লক্ষিন্দরের মেধ নামেও পরিচিত। বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের কিলোমিটার দক্ষিনে গোকুল গ্রামে এটির অবস্থান। এখানে ১৭২ টি চারকোনা কক্ষসহ একটি মঞ্চ পাওয়া যায়
ইস্কান্দারের ধাপঃ এটি দুর্গ এলাকার . কিলোমিটার দক্ষিনে বাঘাপুর গ্রামে রংপুর-বগুড়া মহাসড়কে অবস্থিত। এখানে কার্তিকা নামে একটি কষ্টি পাথরের মূর্তি পাওয়া যায়
খুল্লানার ধাপঃ চাঁদ সাগরের স্ত্রী খুল্লানার নামে নামকরন করা এই জায়গাটি দুর্গের উত্তরপশ্চিম কোণে চেঙ্গিসপুর গ্রামে অবস্থিত
মাহী সওয়ার মাজার শরীফঃ
মহাস্থানগড় বাস স্ট্যান্ড থেকে কিছুটা পশ্চিমে একটি ঐতিহাসিক মাজার শরীফ রয়েছে। পীরজাদা হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (:) কে কেন্দ্র করে প্রাচীন এই মাজার শরীফটি গড়ে ওঠেছিল। কথিত আছে মাছের পিঠে আরোহন করে তিনি বরেন্দ্র ভূমিতে আসেন। তাই তাকে মাহী সওয়ার বলা হয়। প্রচলিত এক গল্প থেকে জানা যায়, হযরত মীর বোরহান নামক একজন মুসলমান এখানে বাস করতেন। পুত্র মানত করে গরু কোরবানী দেয়ার অপরাধে রাজা পরশুরাম তার বলির আদেশ দেন এবং তাকে সাহায্য করতেই মাছের পিঠে আরোহন করে মাহী সওয়ারেরর আগমন ঘটে
ভীমের জঙ্গলঃ বগুড়ার উত্তর পূর্ব থেকে আরম্ভ হয়ে উত্তরে দামুকধারের বিট নামক স্থান পর্যন্ত এই জায়গাটি বিস্তৃত। এই জায়গাটির সাথে সামরিক এলাকার মিল পাওয়া যায় কেননা এখান থেকেই থেকে দেশের পূর্বাংশের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করা হত
জগির ভবনঃ এই জায়গাটি ক্ষেতলাল সড়কের মাইল পশ্চিমে বাগতাহালিতে অবস্থিত। এখানকার পবিত্র স্থানগুলো দক্ষিন পূর্বে অবস্থিত
অররাঃ এটি মাসান দীঘির ওপরে অররা গ্রামে অবস্থিত
তেঘরঃ এটি চাদিনা হাটের উত্তরে অবস্থিত
রোজাকপুরঃ গোকুল থেকে পশ্চিমে যাওয়ার পথে আপনাকে হরিপুর গ্রামের পশ্চিম দিয়ে যেতে হবে। রোজাকপুর গ্রাম চাদনিয়া হাটের কাছে বগুড়া ক্ষেতলাল সড়কে, পশ্চিম হরিপুরে এবং সমরাই বিলের পশ্চিমে অবস্থিত
মাথুরাঃ এটি পূর্ব বুমানপাড়ায় অবস্থিত যা পূর্ব গড় পর্যন্ত বিস্তৃত। মাথুরা গ্রামটি উত্তরে অবস্থিত
মহাস্থানগড় জাদুঘরঃ
 মহাস্থান গড় খননের ফলে মৌর্য, গুপ্ত, পাল সেন যুগের বিভিন্ন দ্রব্যাদিসহ অনেক দেবদেবীর মূর্তি পাওয়া গেছে যা গড়ের উত্তরে অবস্থিত জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। মহাস্থান গড় ছাড়াও আরও বিভিন্ন স্থানের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এখানে সংরক্ষিত আছে। রবি সোমবার সকালে এই জাদুঘরটি বন্ধ থাকে এবং প্রতিদিন দুপুর ১২:৩০ থেকে দুপুর :৩০ পর্যন্ত মধ্যাহ্ন বিরতি
পরশুরামের প্রাসাদঃ এখানে টি আমলের প্রত্নতত্ত্ব রয়েছে। ৮ম শতকের প্রাপ্তির মধ্যে আছে পালা আমলে ভিসনুপাটটার পাথর। ১৫শ-১৬শ শতকের প্রাপ্তির মধ্যে আছে মুসলিম ঐতিহ্যের কিছু উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ১৮৩৫ থেকে ১৮৫৩ সালের মধ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্যাবহার করা দুইটি মুদ্রা পাওয়া যায়

কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে খুব সহজেই সড়ক পথে বগুড়া যাওয়া যায়। বগুড়া শহর থেকে সিএনজি, টেম্পো, রিকশা করে মহাস্থানগড় যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে যে সব বাস বগুড়া যায় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যঃ
১। টি আর ট্রাভেলসঃ সকাল ৭টা থেকে শুরু করে রাত ১১:৩০ মিনিট পর্যন্ত প্রতি ৩০ মিনিট পরপর এটি বগুড়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ফোনঃ গাবতলি-০১১৯১-৪৯৪৮৬৫, মহাখালি-০১১৯১-৪৯৪৮৬৬
২। শ্যামলী পরিবহনঃ সকাল ৬টা থেকে শুরু করে রাত :০০ টা পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টা পরপর এটি বগুড়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ফোনঃ আসাদ গেইট-০২-৯১২৩৪৭১, কলাবাগান-০১৭১১১৩০৮৬২, সায়েদাবাদ-০১৭১২৫৯৬৯৪০
৩। এস আর ট্রাভেলসঃ সকাল :৩০ মিনিট থেকে শুরু করে রাত ১১:৩০ মিনিট পর্যন্ত প্রতি ৩০ মিনিট পরপর এটি বগুড়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ফোনঃ গাবতলি-০২-৮০১১২২৬, উত্তরা-০১৫৫২৩১৫৩১৮
৪। হানিফ এন্টারপ্রাইজঃ ঢাকা বাস স্ট্যান্ড, ফোনঃ ০৫১-৬০৯৪০, ৬০৮০৩, ০১৯১১-৫৬০৮৮২

কোথায় থাকবেন

বগুড়ায় (Bogra) থাকার জন্য রয়েছে বেশ কিছু হোটেল মোটেল। এগুলোর মধ্যে হোটেল নাজ গার্ডেন, পর্যটন মোটেল, সেফওয়ে মোটেল, নর্থওয়ে মোটেল, সেঞ্চুরি মোটেল, মোটেল ক্যাসল এমএইচ, হোটেল আকবরিয়া উল্লেখযোগ্য। আপনি এখানে চার তারকা হোটেলও পেয়ে যাবেন। বগুড়ায় উন্নত মানের থাকার জায়গার মধ্যে আছেঃ

১। হোটেল নাজ গার্ডেনঃ সিলিমপুর, বগুড়া-৫৮০০, বাংলাদেশ। ফোনঃ ৮৮-০৫১-৬২৪৬৮, ৬৬৬৫৫, ৬৩২৭২, ৬৪১৯৭, ৭৮০৮৮
২। পর্যটন মোটেলঃ বনানী মোড়, বগুড়া, ফোনঃ ০৫১-৬৬৭৫৩
৩। আকবরিয়া হোটেলঃ কাজী নজরুল ইসলাম রোড, থানারোড, বগুড়া, ফোনঃ ০১৭১৬-১৭৯৯৮২

বগুড়া শহরের আরও কিছু হোটেলের নাম:
  • মোটেল নর্থ ওয়ে, শেরপুর রোড
  • হোটেল আল আমিন, নবাববাড়ি রোড
  • হোটেল রয়াল প্যালেস, উপশহর
  • হোটেল সান ভিউ,শেরপুর রোড
  • হোটেল সেফওয়ে, শান্তাহার মোড়
  • হোটেল রাজমনি, বগুড়া রাজা বাজার
  • হোটেল হানি ডে, বড় মসজিদ লেইন
  • হোটেল আজিজ, কবি নজরুল ইসলাম রোড
আপনার যাত্রা শুভ আর নিরাপদ হোক- View Bangladesh

No comments

Powered by Blogger.