ফুলের রাজধানী গদখালী, যশোর
নগরজীবনে
কাজ করতে করতে যাঁরা
হাঁপিয়ে উঠেছেন, তাঁদের জন্য ভ্রমণ
খুব প্রয়োজনীয়। ভ্রমণ
মানুষকে অজানাকে জানায়, দূর করে
মনের ক্লান্তি। আর
আপনার ভ্রমণ হয় যদি
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ফুলের হাট গদখালী,
তাহলে তো আর কথাই
নেই। যশোর
শহর থেকে ২৫-৩০
কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে দুটি
থানা ঝিকরগাছা ও শার্শা।
৪ হাজার বিঘা জমিতে
ফুল চাষ করে স্খানীয়
কৃষকরা। এসব
ক্ষেত থেকে প্রতিবছর কয়েক
কোটি টাকা মূল্যের ফুল
উৎপন্ন হয়। আমাদের
দেশের সর্ববৃহৎ ফুলের জোগান আসে
এই গদখালী থেকে।
মোট উৎপাদনের প্রায় ৭০ ভাগই
আসে এখান থেকে।
এখানেই বসে বাংলাদেশের সবচেয়ে
বড় ফুলের পাইকারি বাজার। দীর্ঘ
১৫ বছর ধরে এখানকার
কৃষকরা ফুলের চাষ করে
নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য
লড়ে যাচ্ছেন। তো,
আর দেরি কেন, সময়-সুযোগ করে ঘুরে
আসুন গদখালীতে।
![]() |
ফুলের রাজধানী গদখালী, যশোর |
❑ গদখালী নাম করন
একসময় পর্তুগিজ ডাকাত সরদার রডারিক
এ অঞ্চলে ঘাঁটি গেড়ে
মানুষের ঘুম হারাম করে
দিয়েছিল। একদিন
সে স্থানীয় কমলেশের বাড়িতে হানা দেয়। সেখানে
তার সুন্দরী মেয়ে মাদালসার সঙ্গে
দেখা হয়ে যায় রডারিকের। মাদালসার
সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়।
ক্ষমা চেয়ে প্রেম নিবেদন
করে। পণ
করে, আর ডাকাতি করবে
না। একপর্যায়ে
মাদালসাদের বাড়ির পাশেই আশ্রয়
নেয় রডারিক। আর
মাদালসাকে পাওয়ার জন্য বাঘের
সঙ্গে লড়াইও করে।
এ ঘটনার পর মা
কালীর নামে রডারিককে বরণ
করে নেয় মাদালসা।
পরে দুজনেই সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ
করে। তৈরি
হয় একটি মন্দির।
রডারিকের ‘গড’ আর মাদালসার
‘কালী’ নিয়ে এই মন্দিরের
নাম হয় ‘গডকালী’ মন্দির। সেই
নামের সূত্র ধরে পরে
এই জায়গার নাম হয়
‘গদখালী’।
❑ যা দেখবেন
পথের দু’পাশে লাল,
নীল, হলুদ, বেগুনি আর
সাদা রঙের এক বিস্তীর্ণ
চাঁদর যেন বিছিয়ে রেখেছে
চরাচরে। জমিতে
ফুল চাষ করে এখানকার
চাষীরা। বাড়ির
চারপাশে সৌখিন ফুলের বাগান
নয়। মাঠের
পর মাঠ জুড়ে ফুলের
ক্ষেত। ফুলই
এখানে ফসল। এই দৃশ্য দেখতে
হলে আপনাকে যশোর-বেনাপোল
রোড ছেড়ে ডানে, ফুলের
গ্রাম গদখালীতে নেমে যেতে হবে। গদখালী
বাজারে নেমে ভ্যানে করে
পানিসারা যেতে যেতে এমন
দৃশ্য চোখে পড়বে সবার। ইচ্ছে
হলেই যেকোনো বাগানে নেমে
যেতে পারেন এমন দৃশ্য
দেখতে। চাষ
করা হয় রজনীগন্ধা, গোলাপ,
গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, জিপসি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ
নানা জাতের ফুল।
![]() |
ফুলের রাজধানী গদখালী, যশোর |
যশোর-বেনাপোল রোড ছেড়ে ডানে-বাঁয়ের গ্রামগুলোর পথ
ধরে এগিয়ে গেলেই দেখা
মিলবে দিগন্ত জোড়া ফুলের
ক্ষেত। লাল,
নীল, হলুদ, বেগুনি আর
সাদা রঙের এক বিস্তীর্ণ
চাদর যেন বিছিয়ে রেখেছে
চরাচরে। জমিতে
ফুল চাষ করেন এখানকার
চাষিরা। বাড়ির
চারধারে শৌখিন ফুলের বাগান
নয়। মাঠের
পর মাঠজুড়ে ফুলের ক্ষেত।
ফুলই এখানে ফসল।
অনেকেই ফুলের রাজধানী বলে
এই গদখালীকে। পথের
দুই ধারে গোলাপ, রজনীগন্ধা,
গ্ল্যাডিওলাস, গাঁদা, জারবেরা ফুলের
ক্ষেত। রজনীগন্ধা,
গ্ল্যাডিওলাস, গোলাপ আর গাঁদা
ফুলের চাষ হয় এখানে। যেখানে
গেলে চোখে পড়বে কৃষকদের
ব্যস্ততা। কেউ
ফুল কেটে গরুর গাড়িতে
করে বাজারে নিয়ে যাচ্ছে,
সেখান থেকেই বান্ডিল করে
চালান হয়ে যাচ্ছে ঢাকাসহ
দেশের বিভিন্ন শহরে। বাতাসে
ফুলের মিষ্টি সৌরভ, মৌমাছির
গুঞ্জন, প্রজাপতির ডানার জৌলুশ আর
রঙের অফুরান সৌরভের সমাহার। এক
কথায় মাতিয়ে তোলার মতো
পরিবেশ। পুরুষদের
পাশে নারী-শিশুরাও কাজ
করছে ফুলের ক্ষেতে।
কেউ ফুল কাটছে, কেউ
নিড়ানি দিচ্ছে। আবার
কেউ ফুলের বীজ বুনছে। বাতাসে
ফুলের মিষ্টি সৌরভ, মৌমাছির
গুঞ্জন, প্রজাপতির ডানার জৌলুস আর
রঙের অফুরান সৌরভের সামনে
দাঁড়িয়ে বিশ্বাসই হতে চায় না
জায়গাটা আমাদের রক্ত আর
কোলাহলে ভরা মাটির পৃথিবীরই
একটা টুকরা।
❑ কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে সড়ক, রেল
ও আকাশপথে যশোর যাওয়া যায়।
➫ সড়ক পথঃ ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর,
কলাবাগান থেকে গ্রিন লাইন
সড়ক পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, ঈগল
পরিবহন, শ্যামলী পরিবহনের এসি বাস যশোর
যায়। ভাড়া
৮শ’ থেকে ১ হাজার
টাকা। এ
ছাড়া হানিফ, শ্যামলী, সোহাগ,
ঈগল ইত্যাদি পরিবহনের নন-এসি বাসও
যশোর যায়। ভাড়া
৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা।
➫ রেল পথঃ ঢাকার কমলাপুর থেকে
সপ্তাহের শনিবার ছাড়া প্রতিদিন
সকাল ৬টা ২০ মিনিটে
আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেস
এবং সোমবার ছাড়া প্রতিদিন
সন্ধ্যা ৭টায় আন্তঃনগর ট্রেন
চিত্রা এক্সপ্রেস যশোরের উদ্দেশে ছেড়ে
যায়। ভাড়া
শোভন ৩৫০ টাকা, শোভন
চেয়ার ৪২০ টাকা।
প্রথম শ্রেণি চেয়ার ৫৬০
টাকা। প্রথম
শ্রেণি বার্থ ৮৪০ টাকা। স্নিগ্ধা
শ্রেণি (এসি চেয়ার) ৭০০
টাকা। এসি
বার্থ ১,২৬০ টাকা।
➫ আকা্শ পথঃ ঢাকা থেকে ইউনাইটেড
এয়ারলাইন্স, রিজেন্ট এয়ারলাইন্স ও নভো এয়ারের
বিমান নিয়মিত যশোরের পথে
চলাচল করে। যশোর
বাস স্ট্যান্ড থেকে রিক্সা নিয়ে
চলে যান লোকাল বাস
স্ট্যান্ডে। এখান
থেকেই পেয়ে যাবেন গদখালি
যাবার বাস। গদখালি
(Godkhali) নেমে ক্ষেত দেখার জন্য
ভ্যান নিয়ে নিতে পারেন। ভ্যান
ভাড়া নিবে ১০০-১৫০
টাকা। গ্রামের
রাস্তা দিয়ে যাবার সময়
রাস্তার দুপাশে চোখে পড়বে
ফুলের ক্ষেত। বাসস্ট্যান্ডের
রাস্তার পাশেই সকালে বসে
দেশের সর্ববৃহৎ ফুলের পাইকারি বাজার।
❑ কোথায় কি খাবেন
যশোর
আসলে
এখানকার বিখ্যাত জামতলার মিষ্টি,
খেজুরের গুড়ের
প্যারা
সন্দেশ
ও
ভিজা
পিঠা
মিস
করা
মোটেও
উচিত
হবে
না।
এছাড়া
চার
খাম্বার মোড়ের
‘জনি
কাবাব’
থেকে
কাবাব,
ফ্রাই,
চাপ
বা
লুচি
খেতে
পারেন।
সেই
সাথে
ধর্মতলার মালাই
চা
এবং
চুক
নগরের
বিখ্যাত চুই
ঝাল
খাবারের স্বাদ
থেকে
নিজেকে
বঞ্চিত
করার
কোন
মানে
নেই!
❑ কোথায় থাকবেন
গদখালী ফুলের রাজ্যে বেড়াতে
হলে রাতে থাকার জন্য
যশোর শহরই উত্তম। ঝিকরগাছায়
জেলা পরিষদের ২ টি ডাকবাংলো
রয়েছে। এছাড়া যশোরে বেশকিছু
সকরারি রেস্ট হাউস এবং
আবাসিক হোটেল রয়েছে।
No comments