উয়ারী বটেশ্বর, নরসিংদী
উয়ারী-বটেশ্বর বাংলাদেশের
রাজধানী শহর ঢাকা থেকে
৭০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে নরসিংদীর
বেলাব উপজেলায় অবস্থিত উয়ারী ও বটেশ্বর
নামীয় দুটি গ্রামব্যাপী একটি
প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। ধারণা
করা হয় এটি মাটির
নিচে অবস্থিত একটি দুর্গ-নগরী। বিশেষজ্ঞদের
ধারণা অনুযায়ী এটি প্রায় আড়াই
হাজার বছরের পুরনো।
তবে ২০০০ খ্রিস্টাব্দে আবিষ্কৃত
কিছু প্রত্ন নিদর্শনে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যাণ্ডস এবং নিউ জিল্যাণ্ড
তিনটি দেশের পরীক্ষাগারে কার্বন-১৪ পরীক্ষার প্রেক্ষিতে
উয়ারীর বসতিকে খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০
অব্দের বলে নিশ্চিত করা
হয়েছে।
উয়ারী বটেশ্বর, নরসিংদী view Bangladesh |
নরসিংদী শহর থেকে ৩৫
কিলোমিটার উত্তরে বেলাবো উপজেলার
উয়ারী ও বটেশ্বর দুটি
গ্রাম। উয়ারী বটেশ্বর এ
রয়েছে আদি ইতিহাস। এটি
বাংলাদেশের সর্বপ্রাচীন জনপদ। অসম রাজার
গড় নামে এটি সমাধিক
পরিচিত। প্রত্নতত্ত্ববীদ ও গবেষকগণ ধারনা
করেন যে এটি প্রায়
তিন হাজার বছর পূর্বের
প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন এখানে প্রচীন শিলালিপি
মূদ্রাসহ অনেক সভ্যতার নিদর্শন
পাওয়াগেছে। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তত্বাবধানে এখনো খনন কাজ
চলছে। এখানে পর্যটকদের জন্য
রেষ্ট হাউস করা হচ্ছে।
এ অঞ্চলে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু
করে তাম্র প্রসার যুগ,
আদি-ঐতিহাসিক যুগ, প্রাক-মধ্যযুগ
ও মধ্যযুগে নরসিংদী জেলার উয়ারী-বটেশ্বর
অঞ্চলে মানব-সভ্যতা বিকাশ
লাভ করেছিল তার নিদর্শন
পাওয়া গেছে। এই অঞ্চল
থেকে প্রত্নতাত্ত্বিকগণ ফসিল-উড ও
পাথরের তৈরি প্রগৈতিহাসিক যুগের
হাতিয়ার ও তাম্র-প্রসার
যুগের গর্ত বসতির চিহ্ন
আবিষ্কার করেছেন। এছাড়া এ অঞ্চলে
আবিষ্কৃত হয়েছে প্রায় আড়াই
হাজার বছরের প্রাচীন ৬০০মিঃ
x ৬০০ মিঃ আয়তনের চারটি
দূর্গ প্রাচীর, দূর্গ প্রাচীরের চারিদিকে
রয়েছে পরিখা যা চোখের
দৃষ্টিতে সহজেই অনুধাবন করাযায়।
উয়ারী দূর্গের পশ্চিম দক্ষিণে প্রায়
ছয় কিঃ মিঃ দীর্ঘ
এবং ২০ মিটার প্রসস্ত-
১০ মিটার উচু অসম
রাজার গড় নামে একটি
মাটির বাঁধ রয়েছে। তাছাড়া
প্রত্নতাত্ত্বিক খননে এখানে গলিপথসহ
১৬০মিটার দীর্ঘ রাস্তা আবিষ্কৃত
হয়েছে।
প্রত্নতাত্ত্বিকগণ দাবী করেছেন উয়ারী-বটেশ্বর ছিল প্রাচীন গঙ্গারিডি
রাজ্যের অর্ন্তভূক্ত। উয়ারীতে আবিস্কৃত দ্বিতীয় অনুপম ইট নির্মিত
স্থাপত্যটি জনগণকে বিস্মিত করেছে।
বিপুল সংখ্যক ধাতব, স্বল্প-মূল্যবান পাথর এবং কাচের
পূঁতির অলংকার একটি নগর
সভ্যতার সমৃদ্ধির পরিচয় বহন করে।
২০০৮-০৯ সালের অষ্টম
বারের খনন কাজে কামরাবো
এলাকায় ধুপির টেকের মন্দির
ভিটার আবিষকৃত বৌদ্ধ পদ্ম মন্দিরটি
মধুপুরগড়ের পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের উপত্যকায়
আদি মধ্যযুগে বৌদ্ধসভ্যতা বিস্তার সাক্ষীবাহী।
সাম্প্রতিক প্রত্নতাত্ত্বিক
খননে আবিষ্কৃত হয়েছে পেরেক, লৌহমল,
লৌহ গলানোর ফলে অতি
ক্ষুদ্র বল, মরিচাপড়া লৌহবস্ত্ত
প্রভৃতি। প্রাপ্ত পোড়ামাটি থেকে ধারনা করা
যায় যে, এ স্থানে
উচ্চ তাপমাত্রায় লোহা গলানোর প্রযুক্তির
প্রচলন ও ব্যবহার ছিল।
ওয়ারী-বটেশ্বর প্রত্নস্থানের ধর্মীয় প্রকৃতি জানা যায় না।
তবে প্রত্নস্থলে প্রাপ্ত নবড্ মৃৎপাত্র এতদঞ্চলে
বৌদ্ধ সংস্কৃতির ইঙ্গিত বহন করে।
দিলীপ কুমার চক্রবর্তী (অধ্যাপক,
সাউথ এশিয়ান আর্কিওলোজি, ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি) মনে করেন যে,
উয়ারী-বটেশ্বরের সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব
এশিয়া এবং রোমান সাম্রাজ্যের
যোগাযোগ ছিল। কারণ প্রাপ্ত
রুলেটেড মৃৎপাত্র, স্যান্ডউইচ কাচের পুঁতি, স্বর্ণ
আবৃত কাঁচের পুঁতি, টিন
মিশ্রিত ব্রোঞ্জ ইত্যাদি সব উপকরণ এ
তথ্যের সত্যতার প্রমাণ দেয়। গর্ডন
চাইল্ডের মতে, উয়ারী-বটেশ্বর
অঞ্চলটি টলেমি (দ্বিতীয় শতকের
ভূগোলবিদ) উল্লেখিত ‘সোনাগড়া’। কারণ
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একক রঙের
কাঁচের পুঁতি উয়ারী-বটেশ্বর
ছাড়াও শ্রীলংকার মানটাই, দক্ষিণ ভারতের আরিকামেদু,
থাইল্যান্ডের কিয়ন থম প্রভৃতি
অঞ্চলে পাওয়া গিয়েছে। সম্প্রতি
উয়ারী-বটেশ্বরে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে ইটের
স্থাপনা পাওয়া গিয়েছে যা
গর্ডন চাইল্ডের নগরায়ণ এর বৈশিষ্ট্যকে সমর্থন
করে। খননের ফলে গলিপথসহ
১৬০ মিটার দীর্ঘ রাস্তা
আবিষ্কৃত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা একমত যে, উয়ারী
বটেশ্বরে কেবল নগরায়নই ঘটেনি,
ব্রহ্মপুত্র নদের উপস্থিতির কারণে
এ অঞ্চল একই সঙ্গে
ছিল নদীবন্দর এবং বাণিজ্য নগর।
৯৩৩
সালে
উয়ারী
গ্রামে
শ্রমিকরা মাটি
খনন
করার
সময়
একটা
পাত্রে
জমানো
কিছু
মুদ্রা
পায়।
স্থানীয় স্কুল
শিক্ষক
মোহাম্মদ হানিফ
পাঠান
সেখান
থেকে
৩০-৩৫টি মুদ্রা সংগ্রহ
করেন।
এগুলো
ছিল
বঙ্গদেশের এবং
ভারতের
প্রাচীনতম রৌপ্য
মুদ্রা। সেটাই
ছিল
উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতাত্ত্বিক
নিদর্শনের প্রথম
চেষ্টা। ১৯৭৪-৭৫ সালের পর
থেকে
হাবিবুল্লাহ উয়ারী-
বটেশ্বরের প্রচুর
প্রাচীন নিদর্শন সংগ্রহ
করে
জাদুঘরে জমা
দেন। হানিফ তার একান্ত
নিজের
চেষ্টায় একটি
প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা গড়ে
তোলেন।
তার
মৃত্যুর পরে এই সংগ্রহশালা আগলে
রেখেছে
তার
বড়
ছেলে
হাবিবুল্লাহ পাঠান।
কি ভাবে যাবেন এ সংগ্রহ শালায়
ঢাকা
থেকে
বাসে
চড়ে
নামুন
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মরজাল
বাসষ্ট্যান্ডে। সেখানে
রিক্সাওয়ালাকে বটেশ্বরের হানিফ
পাঠান
বা
হাবিবুল্লাহ পাঠানের নাম
বললেই
আপনাকে
নিয়ে
যাবে।
রিকশা
ভাড়া
লাগবে
৩০
থেকে
৩৫
টাকা।
কিভাবে
যাবেন উয়ারী বটেশ্বর
ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড পার হয়ে
বামে
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ধরে
কিছু
দূর
এগুলেই
নরসিংদী। ঢাকা
থেকে
নরসিংদীর দূরত্ব
৫৪
কিলোমিটার। গুলিস্তান, সায়দাবাদ থেকে
বাস
পাওয়া
যায়।
যেতে
সময়
লাগে
দেড়
ঘন্টা।
ট্রেনেও নরসিংদী যেতে
পারেন।
কমলাপুর থেকে
ট্রেন
পাবেন।
যেতে
সময়
লাগবে
১
ঘন্টার
মত।
ভাড়া
৩০
টাকা।
অথবা মহাখালি থেকে বিআরটিসির ভৈবগামী বাসে
বা
চলনবিল/অন্যনা সুপার পরিবহণের বাসে
উঠুন।
ভৈরবের
মরজাল
বাসস্ট্যান্ডে নেমে
যান।
সময়
লাগবে
দুই
ঘন্টা
ভাড়া
১০০
টাকা।
সেখান
থেকে
খনন
কাজের
জায়গা
যাওয়া
যায়
সিএনজি
করে।
প্রতিজন ৩০
টাকা,
রিজার্ভ ১২০-১৫০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
নরসিংদির উয়ারী বটেশ্বর এ বিরাট ধানক্ষেতের
পাশে একটি সরকারী গেষ্ট
হাউস আছে। এটির বৈশিষ্ট
হলো ২ য় তলায়
বিশাল রুমটির সামনে বিরাট
একটি খোলা ছাদ। অসাধারন
একটি জায়গা। এই গেষ্ট
হাউজটিতে বুকিং দেয়া একদম
সোজা, ভাড়াও কম। বাজার
ও রান্নার দায়িত্ব অনায়াসে দেয়া যায় এর
কেয়ারটেকারের ওপর। এক সকালে চলে
যান সেখানে। সারাদিন কাটিয়ে বিকেলের দিকে
গ্রামটা ঘুরে দেখুন। একফাকে
দেখে নিন উয়ারী প্রত্নতাত্বিক
স্থানটি। রাতে ফিরে আসুন
বাংলোয়। রাতের খাবার খেয়ে
রুমের সামনে খোলা জায়গাটিতে
বসে যান। রাত কখন
শেষ হবে টেরও পাবেন
না।
ডাক বাংলোর ভাড়া ৫০০
টাকা ও ১২০০ টাকা
(এসি রুম)। কেয়ারটেকার
লিটনের ফোন নম্বর ০১৯৩৩২৫১২৪২
✺ আপনার যাত্রা শুভ আর নিরাপদ হোক- ✺ View Bangladesh
No comments