Header Ads

চর কুকরিমুকরি, ভোলা


চর কুকরিমুকরি যারা একবার বেড়িয়ে এসেছেন তারা দ্বিতীয়বার ছুটে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্য একটি মাত্রা যোগ হয়েছে এখানে। এই প্রাকৃতিক বিস্ময়ের ভূস্বর্গ রয়েছে ভোলায়। বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলার মূল ভূখণ্ড থেকে দক্ষিণে মেঘনা নদী পার হয়ে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি চর কুকরিমুকরির অবস্থান। দ্বীপের পূর্বদিকে প্রমত্তা মেঘনা শাহাবাজ চ্যানেল। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে বুড়া গৌড়াঙ্গ এবং মেঘনার মিলনস্থল। চর কুকরিমুকরিকে দ্বীপকন্যাও বলা হয়ে থাকে। ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, বন্যপ্রাণী আর সমুদ্রসৈকতকে ঘিরে সৌন্দর্যের এক বর্ণিল উপস্থিতি যা প্রকৃতি প্রেমিক পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ বছর পুরনো চরে আজও সভ্যতার ছোঁয়া লাগেনি
চর কুকরিমুকরি, ভোলা view bangladesh

ভোলা  (Bhola) জেলা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে অনেকটা সাগরের কোল ঘেষে মেঘনা তেতুঁলিয়া নদীর মোহনায় গড়ে ওঠা এই চর কুকরিমুকরিতেই রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। বঙ্গোপসাগরের কুলে মেঘনা-তেঁতুলিয়ার মোহনায় প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা বিশাল বনাঞ্চল বেষ্টিত দ্বীপে বিচরণ করছে অসংখ্য হরিণ, গরু-মহিষ, বানর এবং নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী। চর কুকরিতে যাওয়ার পথে বিস্তৃত বনায়ন মাঝেমধ্যে চিতাবাঘেরও উপস্থিতি টের পাওয়া যায় দ্বীপকন্যার বুকে। এর পাশাপাশি চর পাতিলা ঢালচরও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা পৃথক দুটি দ্বীপ। এখানেও শীতের সময় বিভিন্ন প্রজাতির পাখিসহ হরিণ, বালিহাঁস মানুষের মন জুড়ানো পরিবেশের সূচনা করে। চর কুকরিমুকরিকে বিশ্ব জীববৈচিত্র্যের স্থান হিসেবে চিহ্নিত করে।
১৯৮৯ সালের ১৪ মে বন বিভাগের কাছে এক (সর্বশেষ সংশোধিত) প্রজ্ঞাপনে লিখিত নির্দেশনা আসে, উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জান-মাল রক্ষায় ভোলায় কমপক্ষে লাখ ৬০ হাজার একর জমিতে সংরক্ষিত শ্বাসমূলীয় (ম্যানগ্রোভ) বনায়ন করতে হবে। সময় মূলত শ্বাসমূলীয় গাছের চারা রোপণ করে বনায়ন শুরু করা হলেও পরে ক্রমে ক্রমে যুক্ত হয় সুন্দরী, গেওয়া, পশুর প্রভৃতি গাছের চারা রোপণ। ছাড়া গোটা এলাকা জুড়েই চোখে পড়ে বিপুল সংখ্যক কেওড়া গাছ। মূলত বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা এই সব গাছ আর আশপাশের নারিকেল গাছ, বাঁশ বেত বন মিলেই এখানে তৈরি হয়েছে আকর্ষণীয় একটি ম্যানগ্রোভ বা শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল। বন বিভাগ বিভিন্ন সূত্র জানায়, ভাঙা গড়ার আবর্তে পড়ে বর্তমান কুকুরি-মুকুরি চরে বনায়নের পরিমাণ ৮৫৬৫ হেক্টর। যার মধ্যে বন্য প্রাণীর অভয়াশ্রম ২১৭ হেক্টর বসতি কৃষি আবাদ আছে প্রায় হাজার ৮১০ হেক্টরে। চরের মানুষের প্রধান পেশা মাছ ধরা কৃষিকাজ
দ্বীপ কুকরি-মুকরি শীতকালের চিত্র ভিন্ন ধরনের। সূদুর সাইরেরিয়া থেকে ছুটে আসা অতিথি পাখিদের আগমনে চরাঞ্চলগুলো যেন নতুন রূপ ধারন করে। বিশেষজ্ঞদের মতে শীত মৌসুমে বাংলাদেশে প্রায় ৬৫০ প্রজাতির অতিথি পাখি আসে। এর মধ্যে সিংহ ভাগই ভোলায় অবস্থান করে। তখন স্বপ্নের দ্বীপ কুকরিমুকরি এর চর অতিথি পাখিদের অভয়ারন্যে পরিনত হয়
এছাড়া এখানকার সমুদ্র সৈকতটিও বেশ পরিচ্ছন্ন নিরিবিলি। দেশের অন্যান্য পর্যটক কেন্দ্র গুলোর তুলনায় কুকরিমুকরি এর চিত্র কিছুটা ভিন্ন ধরনের। মাইলের পর মাইল কৃক্ষরাজির বিশাল ক্যান ভাস স্বপ্নের দ্বীপ কুকরিমুকরিকে সাজিয়েছে সাজের সমারোহে। যেখানে জীবিত গাছের সংখ্যা কোটিরও বেশি। চর কুকরিমুকরি এর ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে একটি খাল। খালটির নাম ভাড়ানি খাল। মেঘনার বিশাল বুক থেকে বয়ে গিয়ে খালটি পড়েছে বঙ্গোপসাগরে। এখানকার ধু-ধু বালিয়াড়ির ওপর দাঁড়ালে সাগরের শোঁ শোঁ শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাবে না। একটু সামনে এগোলেই ঢাল চর। এর পরই বঙ্গোপসাগর। এখানে উত্তাল ঢেউয়ের আছড়ে পড়া দেখলেই মনে পড়ে যাবে কক্সবাজার কিংবা কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের কথা। স্থানীয় মানুষ স্পটটিকে বালুর ধুম নামে ডাকে। তবে কুকরিমুকরি এর প্রধান আকর্ষণ সাগরপাড় এখানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত কিংবা সূর্য ডোবার দৃশ্য ভ্রমণপিপাসুদের মুগ্ধ করবে। আপনি চাইলে পাশের ঢালচর ঘুরতে পারেন

নামকরণ
কথিত আছে যে একসময় কুকরি মুকরি চরে শুধুমাত্র কুকুর আর ইঁদুর ছাড়া আর তেমন কিছুই চোখে পড়তো না। স্থানীয়দের কাছে ইঁদুরের আর এক নাম মেকুর  আর তাই এই চরের নামকরণ হয় চর কুকরি মুকরি

কিভাবে যাওয়া যায়
সদরঘাট থেকে সাব্বির, কর্ণফুলী, রাসেল, টিপু বা রায়হান লঞ্চে (ডাবল কেবিন ১৬০০ / সিঙ্গেল কেবিন আছে) ঘোষের হাট লঞ্চ টার্মিনাল, ভোলা যেতে পারেন। ঘাটে নেমে মোটরসাইকেলে ১৫০ বা টেম্পোতে ৭০-৮০ টাকায় চরফ্যাশন (Char Fashion) সদর। সেখান থেকে বাসে ৩০  অথবা মোটরসাইকেলে ২০০ টাকায় দক্ষিণ আইচা। তারপর ১৫ বা ৩০ টাকায় টেম্পো বা মোটরসাইকেলে চর কচ্ছপিয়া। এরপর ট্রলারে ২০-২৫ টাকা (চাইলে রিজার্ভ করতে পারেন এক হাজার টাকায়) চর কুকরি-মুকরি

কোথায় থাকবেন


 আবহাওয়া ভালো থাকলে ক্যাম্পিং করতে পারেন। তা ছাড়া কোস্ট ট্রাস্ট, বন বিভাগ, ইউনিয়ন পরিষদের রেস্ট হাউসে আলোচনা সাপেক্ষে থাকার ব্যবস্থা আছে

কোথায় খাবেন

কোস্ট ট্রাস্ট, বন বিভাগ, ইউনিয়ন পরিষদের রেস্ট হাউসে আলোচনা সাপেক্ষে খাবার ব্যবস্থা আছে


আপনার যাত্রা শুভ আর নিরাপদ হোক- View Bangladesh

No comments

Powered by Blogger.