ময়মনসিংহের পথে-প্রান্তরে
ময়মনসিংহে
রয়েছে দেখার মতো নানা
কিছু। তাই
একটু সময় ও সুযোগ
পেলে একবার ঘুরে আসতে
পারেন ঢাকার খুব কাছের
এ জেলায়। চার
লেন রাস্তার কাজ প্রায় শেষের
দিকে আর তাই যাতায়াতের
ভোগান্তিও নেই। খুব
সকালের বাসে উঠতে পারলে
মাত্র আড়াই ঘণ্টায় পৌঁছে
যাবেন ময়মনসিংহ। তাই আসুন,
ময়মনসিংহ জেলা সম্পর্কে একটু
চোখ বুলিয়ে নিই।
শশী লজ ময়মনসিংহ-view Bangladesh |
বাংলাদেশের প্রাচীন জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম ময়মমনসিংহ। ১৭৮৭
সালের ১ মে এই
জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ইস্ট
ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে প্রশাসনিক সুবিধা এবং বিদ্রোহ
দমনে ব্রিটিশরা এ জেলা গঠন
করেছিল। ময়মনসিংহের
পুরোনো নাম মোমেনশাহী।
মধ্যযুগে মোমেন শাহ নামে
এক সাধক ছিলেন, তাঁর
নামেই এটি মোমেনশাহী নামে
পরিচিতি পায়। পরবর্তীকালে
বাংলার স্বাধীন সুলতান সৈয়দ আলাউদ্দিন
হোসেন শাহ তাঁর ছেলে
সৈয়দ নাসির উদ্দিন নসরত
শাহর নামানুসারে এর নামকরণ করা
হয় নসরতশাহী বা নাসিরাবাদ।
কিন্তু এ নামে রাজপুতনায়
আরেকটি জায়গা থাকায় নাম
পরিবর্তন করে ময়মনসিংহ রাখা
হয়।
শশী লজ
বোটানিক্যাল গার্ডেন দেখে একটা অটো
নিয়ে চলে যান শশী
লজ-এ। প্রায়
দেড়শ বছর আগে মুক্তাগাছার
জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী ৯
একর জমির ওপর দোতলা
এ নয়নাভিরাম ভবনটি তৈরি করেন। নাম
রাখেন তাঁর দত্তক ছেলে
শশীকান্তর নামে। এ
বাড়িটি ‘ক্রিস্টাল প্যালেস’ বা ‘রংমহল’ নামেও
পরিচিত ছিল। পরবর্তী
সময়ে ১৮৯৭ সালে এটি
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হলেও আবার পুনর্নির্মাণ
করেন জমিদার শশীকান্ত।
বর্তমানে এটি মহিলা শিক্ষক
প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভেতরে
ঢুকতে হলে সামনের গেটে
নিরাপত্তা প্রহরীর অনুমতি নিতে হবে।
আলেকজান্ডার ক্যাসেল ময়মনসিংহ-View Bangladesh |
আলেকজান্ডার ক্যাসেল
শশী লজ দেখা শেষ
করে একটু হেঁটে চলে
যান আলেকজান্ডার ক্যাসেল-এ। আলেকজান্ডার
ক্যাসেল ময়মনসিংহ শহরের পুরোনো একটি
স্থাপনা। মহারাজা
সূর্যকান্ত আচার্য ১৮৭৯ সালে
প্রায় ৪৫ হাজার টাকা
ব্যয় করে ততকালীন জেলা
ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডারের সম্পত্তি রক্ষার্থে এ প্রাসাদটি নির্মাণ
করেছিলেন। প্রাসাদটিতে
লোহার ব্যবহার বেশি করা হয়েছিল
বলে এলাকাবাসী এটিকে ‘লোহার কুঠি’
নাম দিয়েছিল। প্রতিষ্ঠার
পর থেকে ভবনটিতে অনেক
বরেণ্য ব্যক্তির পদধূলি পড়েছে।
১৯২৬ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ময়মনসিংহ সফরের
সময়ে আলেকজান্ডার ক্যাসেলে কিছুদিন ছিলেন। এ
ছাড়া এখানে আরো এসেছিলেন
লর্ড কার্জন, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নওয়াব স্যার
সলিমুল্লাহ, কামাল পাশা প্রমুখ। এটি
বর্তমানে শিক্ষক প্রশিক্ণ কেন্দ্রের
পাঠাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা ময়মনসিংহ-View Bangladesh |
জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা
আলেকজান্ডার ক্যাসেল দেখে হেঁটে হেঁটে চলে যান ব্রহ্মপুত্রের তীরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা দেখতে। ১৯৭৫ সালে এ সংগ্রহশালাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে শিল্পাচার্যের ৭০টি চিত্রকর্ম ছিল কিন্তু কিছু ছবি চুরি হয়ে যাওয়ায় এখন মোট ৬৩টি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। এসব ছবির মধ্যে আছে শম্ভুগঞ্জ ঘাট, শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ, স্কেচ, স্কেচ, স্কেচ, স্কেচ, স্কেচ, স্কেচ (বংশীবাদক), বাস্তুহারা, প্রতিকৃতি এবং অন্যান্য অনেক ছবি। এসব ছবি ছাড়াও রয়েছে তাঁর ব্যবহৃত জিনিস এবং তাঁর কিছু স্থিরচিত্র। সংগ্রহশালাটি শুক্রবারের দুপুর ২টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। অন্যান্য দিন সকাল ১০টা থেকে। প্রবেশ ফি ২০ টাকা।
সংগ্রহশালার ঠিক পাশেই পৌর পার্ক। সুন্দর সাজানো গোছানো ব্রহ্মপুত্র নদীতীরের এ পার্কটিতে অনায়াসে একটা বিকেল কাটিয়ে দেওয়া যায়। এ পার্কের একপাশে রয়েছে নানা মানের রেস্টুরেন্ট আর স্ট্রিট ফুড শপ। ব্রহ্মপুত্রে নৌভ্রমণ করতে চাইলে রয়েছে তারও ব্যবস্থা, আছে গাছপালার অপূর্ব সমারোহ। মোট কথা, একটি প্রাকৃতিক নির্মল পার্কে যা থাকা দরকার সবই আছে।
তাই আর দেরি নয়। যে কোনো এক ছুটির দিনে চলে যান ময়মনসিংহে। দেখে আসুন বাংলাদেশের প্রাচীন এ জেলাকে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে
ময়মনসিংহ (Mymensingh) যেতে
সময় লাগে
তিন ঘণ্টার
মত। বাসের
ভাড়া পড়বে
১২০-১৩০
টাকার মধ্যে।
ঢাকার মহাখালী
থেকে অনেক
বাস ছাড়ে
ময়মনসিংহ এর
উদ্দেশ্যে। এছাড়া
কিশোরগঞ্জ, জামালপুর,
নেত্রকোনা, শেরপুর,
ময়মনসিংহ হয়ে
বাস যাতায়াত
করে।
রেলপথে রাজধানী
ঢাকা থেকে
প্রতিদিন সকাল
থেকে রাত
১১টা পর্যন্ত
মোট ৭টি
মেইল ট্রেন
ময়মনসিংহ আসে।
এছাড়া প্রতিদিন
ঢাকা থেকে
৩টি লোকাল
ট্রেন ময়মনসিংহে
আসে। ময়মনসিংহ
নেমে অটো
রিক্সা বা
অটো করে
সোজা চলে
যেতে পারেন
আলেকজান্ডার ক্যাসেল
এ, ভাড়া
পড়বে ২০-৩০
টাকা।
কোথায় থাকবেন
ময়মনসিংহ শহরের
থাকার মতো
উন্নতমানে হোটেল
হচ্ছে হোটেল আমির ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল
আল হেরা,
হোটেল মোস্তাফিজ,
সিলভার ক্যাসেল,
রিভার প্যালেস
(৩৩৮ তালতলা
ডোলাদিয়া, খাগডহর,
ময়মনসিংহ। মোবাইল:
০১৭১০৮৫৭০৫৪)।
আমির ইন্টারন্যাশনালে
এক্সিকিউটিভ ৪
হাজার ৭৫০
টাকা থেকে
৬ হাজার
৩শত টাকা,
এসি ডাবল
রুম ১৫
শত থেকে
২১ শত
টাকা, ননএসি
ডাবল ১১শত
১৩ টাকা,
সিঙ্গেল ৮শত
৬১টাকা। ঠিকানাঃ
৪৬, ৪৬/এ
ষ্টেশন রোড,
ময়মনসিংহ। যোগাযোগঃ ০১৭১১১৬৭৯৪৮
হোটেল আল
হেরা এসি
ডাবল রুম ১২শত
থেকে ১৬
টাকা, সিঙ্গেল
১২শত টাকা,
ননএসি ডাবল
৮শত টাকা,
সিঙ্গেল ৫শত
টাকা। ঠিকানাঃ
৩৬/বি
টাঙ্কপট্টি, ময়মনসিং।
যোগাযোগঃ ০১৫৫২৪৭০৭০০
হোটেল মোস্তাফিজে
এসি ডিলাক্সে ২৫শত
টাকা, এসি
ডাবল ১৭৫০
টাকা, সেমি
ডাবল ১৪৫০
টাকা, সিঙ্গেল
১হাজার টাকা,
ননএসি ডাবল
১১শত টাকা,
সিঙ্গেল ৫শত
টাকা। তবে
ডাবল রুমে ১৫%,
সিঙ্গেল রুমে ১০%
ডিসকাউন্ট রয়েছে। ঠিকানাঃ ৬/বি
গঙ্গাদাস গুহরোড,
ফায়ার সার্ভিসের
পশ্চিম পাশে,
ময়মনসিংহ। যোগাযোগঃ ০৯১-৬৩৮৭১
আরো কম
টাকায় থাকতে
চাইলে হোটেল
আসাদ, ঈশা
খাঁ (মোবাইল:
০১৭২১-১৪৪৯৭৬),
নিরালায় (ফোন:
০৯১-৫৪২৮৫)
যেতে পারেন।
কোথায় খাবেন
উন্নতমানে খাবার
হোটেলের মধ্যে
হোটেল খন্দকার,
সারিন্দা, ধান
সিড়ি, রোম
থ্রি, সেভেন
ইলেবেন, হোটেল
মিনার ও
ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব
কেন্টিন। এসব
হোটেলে সব
ধরনের খাবারই
পাওয়া যায়।
শহরের ঐতিহ্যবাহী
ও পূরোনো
হোটেল খন্দকারে
শুধুমাত্র দেশীয়
খাবার পরিবেশ
করা হয়।
হোটেলের সত্বাধিকারী
খন্দকার শরীফ
জানান, জনপ্রতি
নিন্মে ৫০
টাকা থেকে
সর্বোচ্চ ৩শত
টাকায় দেশীয়
ও উন্নতমানের
খাবার খেতে
পারবেন। এছাড়াও
আরো অনেক
খাবার হোটেল
রয়েছে এ
শহরে।
✺ আপনার যাত্রা
শুভ আর নিরাপদ হোক-
✺ View Bangladesh
No comments